মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
জাতীয়ভিন্ন খবরশিক্ষাসারাদেশ

তুলশীমালার পর শেরপুরের ‘ছানার পায়েস’ পেলো জিআই পণ্যের স্বীকৃতি

শেরপুর প্রতিনিধি:

গুটিগুটি মিষ্টি সুস্বাদু রসালো খাদ্যের নাম ছানার পায়েস যা শেরপুরের একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিচিত্র খাবারের মধ্যে শত বছরের সুখ্যাতি আছে এ পায়েসের। যেকোন উৎসব আয়োজনে ভোজন রসিক বাঙালির খাদ্য তালিকায় ছানার পায়েস বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে। দুগ্ধজাত এ খাবার সব বয়সের লোকের পছন্দ। দেশ জুড়ে শেরপুরের ছানার পায়েসের কদর রয়েছে। প্রবাসীদের বদৌলতে দিন দিন বিদেশেও এই পায়েসের চাহিদা বাড়ছে।

জনশ্রুতি আছে, প্রায় শত বছর আগে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম ছানার পায়েস তৈরি করা হয়। সে সময়কার জমিদাররা ঘোষপট্টির বানানো ছানার পায়েস বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন কিংবা জমিদারের কাছে উপঢৌকন হিসেবেও এ পায়েস পাঠানো হতো। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদসহ যেকোন অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে ছানার পায়েসের সুখ্যাতি রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শেরপুরে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার ছানার পায়েস খাননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছানার পায়েস না খেলে শেরপুর ভ্রমণ যেন পূর্ণতা পায়না।

বর্তমানে শেরপুর শহরের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রেমানন্দ গ্রান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, চারু সুইটস, বল্লভ মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ সদর উপজেলার অন্তত ২০টি দোকানে এই মিষ্টি প্রতিকেজি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

গুণে ও মানে অনন্য শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন শেরপুরের ছানার পায়েসকে ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন (জিআই) পণ্য হিসেবে ৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান-এঁর স্বাক্ষরিত নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে।

শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করে শেরপুরের ছানার পায়েস।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভৌগোলিক নির্দেশক ইউনিট ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ বিধি-২৮(১) মোতাবেক এই নিবন্ধন দেওয়া হয়। যার নিবন্ধন সনদ নম্বর জিআই-৫৬ এবং ভৌগোলিক নির্দেশক নম্বর ৮৮।

’আওয়ার শেরপুর’-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত খাবারের দেশ-বিদেশে পরিচিতির লক্ষে গত ৪ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে ৬ মে (শনিবার) পর্যন্ত ’বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভাল: টেস্ট অফ বাংলাদেশ’ নামে এক বিশেষ মেলা হয় রাজধানী ঢাকার বনানী কামাল আতাতুর্ক পার্কে। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই কান্ট্রি ব্রান্ডিং একটি অসাধারণ আয়োজন ছিলো। ওই মেলায় ৩৯টি পণ্যের মধ্যে শেরপুরের ছানার পায়েস ও জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলশীমালা চালের আলাদা দুটি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রতিনিধি দল।

শেরপুরের এই পণ্য দুইটি রাজধানীবাসীসহ মেলায় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে আসা দেশ-বিদেশের দর্শকদের নজর কাড়ে।

এই মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও মেলায় বসানো স্টল সমূহ পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। ওই মেলা থেকেই শেরপুরের ছানার পায়েসের পরিচিতি ও কদর কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যা শেরপুরের ছানার পায়েসকে ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্তি একধাপ এগিয়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে চলতি মাসের তথা ডিসেম্বরের ২ তারিখে জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করে শেরপুরের ছানার পায়েস। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভৌগোলিক নির্দেশক ইউনিট ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ বিধি-২৮(১) মোতাবেক এই নিবন্ধন দেওয়া হয়। আর নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয় ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। সনদ পাওয়ার সংবাদটি জানাজানি হলে শেরপুর শহরে ছানার পায়েস বিতরণের হিড়িক পরে যায়।

আওয়ার শেরপুরের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছানার পায়েস শেরপুরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি শেরপুরে ব্র্যান্ডিং ও ঐতিহ্য আরও বহুদূর নিয়ে যাবে।’

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেরপুরের ছানার পায়েস দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমরা বৃহস্পতিবার সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।

ডেস্ক নিউজ

মন্তব্য করুন

error: Alert: Content selection is disabled!!