বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
জাতীয়

নিবন্ধনহীন চলছে দেশের বড় বড় হাসপাতাল

বছরের শুরুতে সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেও খোদ রাজধানীতেই বেশ কিছু বড় বেসরকারি হাসপাতাল চলছে নিবন্ধন ছাড়া। তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত জানুয়ারি মাসে নিবন্ধন না থাকা ১ হাজার ২৭টি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের (ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ব্লাড ব্যাংক) তালিকা করেছিল। তালিকাটি ছিল সারা দেশের। অনেক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য কখনো আবেদনও করেনি। এর মধ্যে রাজধানীর বড় কিছু প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই তালিকায় রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে দেশের বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বারডেম-২ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের নিবন্ধনের জন্য এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো আবেদনও করা হয়নি। আইন অনুসারে, মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করতে হলে ওই প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল থাকতে হয়; কিন্তু ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের নামে কোনো হাসপাতাল নেই।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর আর নিবন্ধন নবায়ন করেনি। আইনগতভাবে এ হাসপাতাল এখন অবৈধ। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এর প্যাথলজি বিভাগের জন্য নিবন্ধন পেতে ২০২১-২২ অর্থবছরে আবেদন করা হয়েছিল, এরপর আর আবেদনও করা হয়নি। মোহাম্মদপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট রক্তকেন্দ্রের কোনো নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের জন্য একটি আবেদন করা হলেও তাতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়নি। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ নামে একটি হাসপাতালও স্থাপন করা হয়েছে। সাইনবোর্ডে নাম লেখা আছে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। কিন্তু এই নামে কোনো নিবন্ধনের আবেদন নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। একটি আবেদন করা হয়েছে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিবন্ধন নবায়ন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। হলি ফ্যামিলির রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছিল; কিন্তু সমস্যা থাকায় নিবন্ধন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোনো হাসপাতাল নেই। মালিকানার দ্বন্দ্বে পৃথক হাসপাতাল হিসেবে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নিবন্ধন চেয়েছে। তিনি বলেন, বারডেম-২ হাসপাতালের নিবন্ধন না থাকার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেছিলেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ। এরপরই সারা দেশের নিবন্ধনহীন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও ব্লাড ব্যাংকের তালিকা দিতে আদেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে কত রোগী মারা গেছেন, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) সারা দেশের নিবন্ধনহীন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আরেক আদেশে ওই কর্মকর্তাদের প্রতি বেসরকারি নিবন্ধনহীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে জানাতে বলেছিলেন।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশে অবৈধভাবে পরিচালিত ১ হাজার ২৭টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা জমা দেওয়া হয় উচ্চ আদালতে। তবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর।

সেগুলোর বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শিথিল কেন জানতে চাইলে ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে আবার অভিযান শুরু হবে। যেহেতু বিগত সময়ে অবৈধ হাসপাতালগুলোক নিবন্ধন নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তাই জুন মাস পর্যন্ত সে সুযোগ তাঁরা পাবেন।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, নিবন্ধনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নিবন্ধন না থাকলে কোনো জবাবদিহি থাকে না। ওই হাসপাতালে রোগীরা যদি হয়রানির শিকার হন, প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাতকে অবাধ সুযোগ দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবাকে জনদুর্ভোগে পরিণত করা হয়েছে। তাই যত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানই হোক, তাদের অবশ্যই নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে।

ডেস্ক নিউজ

মন্তব্য করুন

error: Alert: Content selection is disabled!!