রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পপি খাতুন। তার বয়স মাত্র ২২ বছর। বলা হচ্ছে, দেশের সর্বকনিষ্ঠ নারী ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। সর্বকনিষ্ঠ জনপ্রতিনিধির এই তকমা পেতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে ‘বয়স জালিয়াতির’। শুধু তাই নয়; নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তাকে জন্মও নিতে হয়েছে ‘তিনবার’। বিষয়টি আশ্চর্যজনক মনে হলেও কালবেলার অনুসন্ধানে তার তিনটি জন্মতারিখ পাওয়া গেছে।
তার পুরো নাম মোসা. পপি খাতুন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী দিয়েছিলেন ২০১১ সালে। আর এসএসসি পাস করেছেন ২০১৭ সালে। শিক্ষাগত সনদ ও সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ২২ বছর। বর্তমানে অনার্সে পড়ছেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক আর মিউজিক ভিডিও করে বেড়াতেন তিনি। রাজনৈতিক পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও কোনো পদ-পদবি নেই তার। সে পপিই সবাইকে তাক লাগিয়ে এবার রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও ভোটে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে রহস্যজনক কায়দায় তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) বয়স বাড়িয়েছেন।
তার শিক্ষাগত কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পবা উপজেলার ধর্মহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেন। ওই সনদে তার জন্মতারিখ ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০১৭ সালে স্থানীয় দারুশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এসএসসির কাগজপত্রে জন্মতারিখ রয়েছে ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি। এই জন্মতারিখ সর্বশেষ ভোটার তালিকাতেও রয়েছে। তার ভোটার আইডি নং ৮১০৮১৩০০০১৮৮।
তবে নির্বাচনের আগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পপি তার সব সনদে জন্মতারিখ পরিবর্তন করে ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি লেখার আবেদন করেন। গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষা বোর্ডের নাম ও বয়স সংশোধন কমিটির সভায় তা পাস হয়। সর্বশেষ সংশোধিত বয়স অনুযায়ী, কাগজে-কলমে তার তিনটি জন্মতারিখ পাওয়া যায়। বয়স বাড়িয়ে ভোটে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছিলেন এমন অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে কালবেলার এই প্রতিবেদক এসব তথ্য উদ্ঘাটন করে।
উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ অনুযায়ী, প্রার্থীর বয়স অন্তত ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু তার শিক্ষা-সংক্রান্ত কাগজপত্র অনুযায়ী জন্মতারিখ হিসেবে বয়স ২২বছর। ভোটে প্রার্থী হতে গত ২০ মার্চ জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল সংশোধনের আবেদনটি বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে আরেকটি আবেদনও করেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে আরেকটি আবেদন করেন। এতে তিনি জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদন বহাল রাখার অনুরোধ করেন।