বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
শিক্ষা

আবৃত্তিতে মন কাড়ে সারিকা

কবিতা আবৃত্তিতে এখন আর আগের মতো মঞ্চ স্তব্ধ হয় না। তবে কিছু কিছু আবৃত্তি এখনো মানুষের মন কাড়ে, মঞ্চ স্তব্ধ করে। তাতে মুহুর্মুহু করতালি দেন উপভোগকারী শ্রোতারা। এমন করতালির শব্দ কানে আসায় কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যাই। উঁকি দিয়ে দেখি হলভর্তি মানুষ। ডায়াসে দাঁড়িয়ে একজন আবৃত্তি করছে। তাতে সবাই মুগ্ধ।

আমিও তার আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে যাই। মনকাড়া এই আবৃত্তিকারের নাম সারিকা সাঈদ। যশোরের ঝিকরগাছায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত কবিতা আবৃত্তিতে আন্ত-উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সারিকা সাঈদ প্রথম হয়।

সারিকা সাঈদ ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শ্রেণিতে সে প্রথম। আবৃত্তি, উপস্থাপনা, বক্তৃতা, ছবি আঁকা ও বিতর্কে তার জুড়ি নেই। এতটুকুন বয়সেই কৃতিত্বের জন্য বেশ কয়েকটি প্রশংসা সনদ তার হাতে উঠেছে।

সারিকা জীবনে প্রথম মঞ্চে উঠেছিল নার্সারিতে পড়ার সময়, মা-বাবার ইচ্ছায় এক অনুষ্ঠানে। কিন্তু সে সময়ে সেই আবৃত্তি কেমন হয়েছিল, সেটা বোঝার বয়স তখন সারিকার ছিল না। এখন অনেক লোকের সামনে যখন আবৃত্তি করে, তখন মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে বুঝতে পারে কতটুকু ভালো হচ্ছে। তবে সারিকা এখন মঞ্চে শুধু আবৃত্তি নয়, উপস্থাপনা, বক্তৃতা ও বিতর্কে সমান পারদর্শী। আর এসবের স্বীকৃতিতে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছে একাধিক পুরস্কার।

নার্সারিতে পড়ার সময় জীবনের প্রথম পুরস্কারটি তার হাতে ওঠে আবৃত্তির জন্যই। সেটিও সারিকার মনে আছে। ২০১৫ সালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিবর্তন ঝিকরগাছার আয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল সে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ধ্রুব পরিষদ বাংলাদেশ আয়োজিত আবৃত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম এবং ২০১৮ ও ২০২০ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। ২০২০ সালে জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে জেলা পর্যায়ে তৃতীয় হয়েছিল সারিকা।

বিবর্তন ঝিকরগাছার আয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে আবৃত্তিতে ২০১৮ সালে দ্বিতীয়, একই বছর চিত্রাঙ্কনে প্রথম ও ২০১৯ সালে আবৃত্তিতে দ্বিতীয় হয়। ২০২৩ সালে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় সে। এ ছাড়া জাগ্রত ঝিকরগাছা ট্রাস্টের আয়োজনে অর্পণ-দর্পণ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘মিথ্যামুক্ত সমাজ গড়ি শুদ্ধাচার অনুশীলন করি’ এই ভাবনায় আন্ত-উপজেলা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এ বছর জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার পায় সারিকা। সম্প্রতি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান লাভ করে সে। সারিকা প্রাক্-প্রাথমিক থেকে এ পর্যন্ত তার শ্রেণিতে প্রথম।

ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আহছান উদ্দীন বলেন, ‘সারিকা সাঈদ খুবই মেধাবী। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, উপস্থাপনা, অঙ্কন, বিতর্ক ও বক্তৃতায় পারদর্শী।’

সারিকার বাবা এস এম সাইদুর রহমান জেলা সদরের নতুনহাট পাবলিক কলেজের প্রভাষক এবং মা মোসাম্মত তানিয়া আফরোজ মনিরামপুর উপজেলার রাজাগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। তাঁরা ঝিকরগাছা পুরোনো কলেজপাড়ার বাসিন্দা। সারিকা দুই ভাইবোনের মধ্যে বড়। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়া সারিকার স্বপ্ন।

ডেস্ক নিউজ

মন্তব্য করুন

error: Alert: Content selection is disabled!!